geict38@gmail.com +880 1922508999

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: কর্মসংস্থানের ভবিষ্যত ও চ্যালেঞ্জ

লন্ডনে আয়োজিত AI Safety Summit-এ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সাথে এক আলোচনায় টেক বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) কারণে এমন একটি সময় আসতে পারে যখন কাওকে কোনো চাকরি করতে হবে না এবং মানুষের কায়িক পরিশ্রম করার প্রয়োজন পড়বে না। তবে মাস্কের এই ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে দ্বিমত পোষণ করে এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং বলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে। নিকট ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে তা কিছু প্রতিবেদনের আলোকে আলোচনা করা যাক।

জেনারেটিভ এআই এর প্রভূত উন্নয়নের ফলে চাকরির বাজারে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছেচ্যাটজিপিটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে এবং ১ বছরের মধ্যে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি আশি লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় খুব দ্রুত হারে এআই আমাদের কর্মক্ষেত্রে এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে

Resume Builder বিশ্বের 750 জন ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের উপর এক জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের রিপোর্ট মোতাবেক ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের এক-তৃতীয়াংশ (৩৭%) বলছেন AI দ্বারা এ বছর (২০২৩ সালে) তাদের প্রতিষ্ঠানের জনবল প্রতিস্থাপিত হয়েছে এবং তাদের ৪০ শতাংশের অনুমান ২০২৪ সালে AI তাদের কম্পানির আরও জনবল প্রতিস্থাপিত করবে। ৭৫০ জনের মধ্যে ৯৬% বলছেন তারা নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে এআই স্কিলকে প্রধান্য দিবেন। রিপোর্টটি এই লিঙ্কে গিয়ে বিস্তারিত পড়তে পারেনঃ  1 in 3 Companies Will Replace Employees With AI in 2024।  

আরেকটি গবেষণা বলছে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৮০ লক্ষ চাকরি হারিয়ে যাবে AI এর কারণেগবেষণাটি থেকে আরও যানা যায়,  যুক্তরাজ্যের কর্মীরা যে ২২,০০০ হাজার ধরণের কাজ করেন তার ১১ শতাংশই AI দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সব থেকে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে এন্ট্রি লেভেল এবং খন্ডকালীন কাজগুলো যেগুলোতে সাধারণত নারীরা নিয়োজিত রয়েছে।

আইএমএফ এর আরেকটি প্রতিবেদন বলছে সারা বিশ্বের ৪০ শতাংশ চাকরি এআই দ্বারা প্রভাবিত হতে যাচ্ছে এবং আর অনুমান করা হচ্ছে বিশ্বের বৈষম্যের পরিমাণ বাড়বে।  আইএমএফ এর এই রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায় নিম্ন আয়ের দেশগুলো সব থেকে বেশি প্রভাবিত হবে। তবে রিপোর্টটি এও বলছে AI উৎপাদশীলতা এবং কর্মদক্ষতা বাড়াবে।

তবে শুধু যে চাকুরির বাজার সংকুচিত হবে তা নয়, AI নতুন কিছু চাকুরীর বাজারও তৈরী করবে। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম এর ফিউচার জবস রিপোর্ট-২০২৩ বলছে, ২০২৭ সালের মধ্যে প্রায় ২৩ শতাংশ চাকুরীর ধরন পরিবর্তিত হবে  যেখানে ৬ কোটি ০ লাখ নতুন চাকরির বাজার তৈরি হবে এবং ৮ কোটি ০ লাখ চাকরি হারিয়ে যাবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ১ কোটি ১৪ লাখ চাকরি বাজার থেকে সংকুচিত হচ্ছে। এই রিপোর্ট অনুসারে, দ্রুত বর্ধনশীল পেশাগুলোর মধ্যে থাকবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং স্পেশালিস্ট, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স স্পেশালিস্ট, ইনফরমেশন সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট, বিগ ডেটা এনালিস্ট ইত্যাদি। চ্যাটজিপিটি এর মত জেনারেটিভ এআই এর ব্যাপক ব্যবহারের ফলেPrompt Engineering নামক নতুন একটি পেশার চাহিদা এখন তুঙ্গেব্লুমবার্গের একটি রিপোর্ট মোতাবেক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাৎসরিক ৩,৩৫,০০০ ইউএস ডলার এ Prompt Engineer নিয়োগ দিচ্ছে যা টাকার হিসেবে প্রায় তিন কোটি ৮০ লক্ষযারা Prompt Engineering শব্দটি প্রথম শুনছেন তাদের জন্য বলে রাখি Prompt Engineering হলো ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ChatGPT এর মত Large Language Model গুলোকে এমনভাবে নির্দেশনা প্রদান করা যাতে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে Prompt Engineering একটি প্রয়োজনীয় দক্ষতা হিসেবে দেখা দিবেবাইডু এর সিইও এবং সহ প্রতিষ্ঠাতা রবিন লি এর মতে আগামী ১০ বছরে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের কাজই হবে এআই মডেলগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা।

এটা স্পষ্ট যে এআই এর ফলে চাকুরীর বাজার সংকুচিত হবে এবং যে নতুন চাকুরী তৈরী হবে তার মধ্যে এআই এবং মেশিন লার্নিং স্পেশালিস্ট এর বিশেষ চাহিদা তৈরী হবে। এছাড় অধিকাংশ চাকুরির ক্ষেত্রে এআই টুলসের ব্যবহার প্রয়োজনীয় দক্ষতা হিসেবে দেখা দিবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাংলাদেশের চাকুরী বাজারে কী ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে সেটা নিয়ে কোন গবেষণা বা রিপোর্ট গুগলে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাবে এ ধরণের গবেষণা হয়ে না থাকলে তা দ্রুত করা প্রয়োজন। তবে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের ডেইলি স্টার পত্রিকার একটি রিপোর্ট A2i ILO কে উদ্ধৃত করে বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে রোবটিক্স ও অটোমেশনের ফলে তৈরি পোশাক শিল্পের ৬০ শতাংশ শ্রমিক তাদের কাজ হারাবে। এআই এবং অটোমেশনের ফলে বাংলাদেশের চাকরির বাজারেও প্রভাব পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সুতরাং এআই এর ফলে চাকুরী বাজারে যে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে যাচ্ছে তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় খুব দ্রুত উদ্দোগ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষা ব্যাবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

এই নতুন ধরণের চাকুরীর বাজারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে গণিত, প্রোগ্রামিং, পরিসংখ্যানের মত বিষয়গুলোতে বিশেষ জোর দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া বৈশ্বিক চাকুরী বাজারের ধারা বিবেচনা করে ‍উচ্চ শিক্ষায় ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং এর মত বিষয়গুলোতে গুরুত্ব বাড়ানো উচিৎ।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই না, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন বিষয় থেকে লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েট তৈরী হচ্ছে যারা দেশের চাকুরীর বাজারের উপযোগী হয়ে উঠতে পারছেনা সেখানে ভবিষ্যাতের চাকুরীর বাজার তাদের জন্যে আরও কঠিন হয়ে উঠবে। যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্সে প্রতিটি বিষয়ের জন্য প্রথম বর্ষে একটি আইসিটি বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে কিন্তু সেটা মোটেই যথেষ্ট নয়।

 

0 Comments

Please Login to leave a comment